পৃথিবীর আলো দেখার আগেই মাতৃগর্ভেই গুলিতে ক্ষতবিক্ষত। তারপর কঠিন ইতিহাসের সাক্ষী।অবশ্য সে নিজেও এক ইতিহাস।কারণ পৃথিবীর প্রথম মায়ের পেটে গুলি খেয়ে বেঁচে উঠা শিশু সেই প্রথম। অবশেষে মাগুরায় মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়াকে সুস্থ অবস্থায় আনুষ্ঠানিকভাবে তার মায়ের কোলে দিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভাকক্ষে এক আনন্দঘন পরিবেশে শিশুটিকে মায়ের কোলে তুলে দেয়ার পাশাপাশি হাসপাতাল থেকে তাদের বিদায়ও জানানো হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিশুটির চিকিৎসার জন্য গঠিত বোর্ডের প্রধান ও নবজাতক (এনআইসিইউ) বিভাগের প্রধান ডা. আজিজ হোসেন মোল্লা, সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল হামিদ টাবলু, অধ্যাপক আশরাফুল হক কাজল, সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ হাসিনা শিউলীসহ বোর্ডের ১০ চিকিৎসক এবং হাসপাতালের নার্স ও কর্মচারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে শিশুটির বর্তমান অবস্থা তুল ধরে বোর্ডপ্রধান অধ্যাপক আজিজ হোসেন মোল্লা বলেন, ‘গত ৩০ বছর এ পেশায় থাকলেও এই প্রথম গর্ভে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ শিশুর চিকিৎসা করেছি। আমি প্রথম শিশুটির মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখি। প্রথমাবস্থায় শিশুটি ছিল ক্ষতবিক্ষত। ওজন কম থাকার পাশাপাশি তার চোখেও সমস্যা ছিল। কিন্তু এখন তার ওজন সাড়ে ২১শ গ্রাম। শিশুটি এখন নিজেই মায়ের দুধ পান করছে।’
তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘শিশুটি ও তার মায়ের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে এসেছে সর্বস্তরের মানুষ। আমাদের ওয়ার্ড বয়ও তাকে ২ ব্যাগ রক্ত দিয়েছে।’
অধ্যাপক আজিজ হোসেন মোল্লা আরো বলেন, ‘আমি পৃথিবীর অনেক দেশে সার্চ করে দেখেছি, মায়ের পেটে গুলি খেয়ে বেঁচে উঠার ঘটনা এটিই প্রথম। এর আগে ব্রাজিলে এমন দুইটি ঘটনা ঘটলেও শিশু দুটি বাঁচেনি।’
শিশুটির সার্বক্ষণিক দায়িত্বে ছিলেন ডা. কানিজ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার অসীম করুনায় এবং সবার সহযোগিতায় শিশুটি এখন সুস্থ্য ও স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। আমি সার্বক্ষণিক দায়িত্বে ছিলাম বলে তার সুস্থ্যতায় আমার খুব ভালো লাগছে।’
এদিকে নবজাতকের মা নাজমা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে পরিবারের নিরাপত্তার কথা বললে মন্ত্রী নাসিম বলেন, ‘শুধু নিরাপত্তাই দেয়া হবে না, পাশাপাশি শিশুটির জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই সরকার করবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুটির সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছেন বলেও মন্ত্রী জানান।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের অধ্যক্ষ ড. ইসমাইল খান, পরিচালক ব্রি. জে. মিজানুর রহমান, স্বাস্থ্য সচিব।
0 comments: