অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আজ বসন্তের রঙ লেগেছে। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিনে মেলা প্রাঙ্গণকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, শিল্পকলা একাডেমী, শহীদ মিনারসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নেমেছে মানুষের ঢল। সাপ্তাহিক ছুটি শনিবার বসন্তের প্রথম দিন হওয়ায় সকালে সবারই গন্তব্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও গ্রন্থমেলা। কারণ সকাল থেকেই ঢাবির চারুকলার বকুলতলায় বসন্ত বরণের উৎসব চলছে। সেই সঙ্গে মেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ছিল শিশুকিশোরদের সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব। সকাল ১১টায় মেলার ঝাঁপ খোলার সাথে সাথে বসন্তবরণ উৎসবে অংশ নেয়া তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী মানুষের ঢলটি নামে মেলা প্রাঙ্গণে। এছাড়া সে সকল শিশুকিশোর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য বাংলা একাডেমিতে এসেছে, তাদেরও একটা চাপ ছিল মেলায়। নিজস্ব সংস্কৃতির বসন্ত উৎসবকে ঘিরে নারীরা বাসন্তী রঙের শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে হাতে-খোঁপায় হলুদ গাদা ফুলসহ বাহারি ফুলে নিজেদের সাজিয়ে আসে মেলা প্রাঙ্গণে। সেই সঙ্গে হাতে বাজে রিনিঝিনি শব্দে কাঁচের চুড়ি। অনেকে আবার পরিবারসহ মেলায় এসেছে বসন্তের সাজে। পুরুষরাও নিজেদের সাজ-পোশাকে রেখেছে বসন্তের ছোঁয়া। বসন্তের প্রথম দিনে আজ মেলার অন্যান্য দিনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বিক্রি হয়েছে বলে প্রকাশকরা জানান। এমন জমজমাট বিক্রি এবারের মেলায় এ প্রথম উল্লেখ করেন আগামী প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী ওসমান গনি। শুধু পাঠকদের মাঝেই না, বসন্তের এ আগামনী ছোঁয়া লেগেছিলো স্টলগুলোতেও। বিক্রয়কর্মীরাও সেজে এসেছিলেন বসন্তের রঙে। প্রতিটি স্টলে ছিল বইপ্রেমীদের ভিড়। যাচাই বাছাই করে তাদের পছন্দের লেখকের বইটি কিনতে দেখা গেছে। আগামীকাল রোববার সাপ্তাহিত ছুটি না থাকলেও ভালোবাসা দিবসের কারণে কালও এমন বিক্রি হবে বলে ওসমান গণি আশা করেন। নতুন বই আজ মেলার ১৩তম দিনে দেড় শতাধিক নতুন বই এসেছে। আজকের নতুন বইয়ের মধ্যে ঐতিহ্য এনেছে জিয়া হাশান ভাষান্তরিত হারুকি মুরাকামির শোনো বাতাসের সুর, তামিম কবিরের 'ইয়োলো ক্যাব' ও অশোক দাশগুপ্ত অনুদিত গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ 'গ্রেগরি রাবাসার লিফ স্টর্ম' ও অনুপ্রাণন এনেছে মাহতাব হোসেনের 'তনিমার সুইসাইড নোট।' শিশুকিশোর সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতা আজ সকালে একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশুকিশোর সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন শিশুসাহিত্যিক সুজন বড়ুয়া, নাট্যজন মাসুম রেজা এবং শাহিদা খাতুন। মূলমঞ্চ বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধচর্চা: অতীত থেকে বর্তমান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ড. মোহাম্মদ সেলিম এবং দিব্যদ্যুতি সরকার। সন্ধ্যায় পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।