বাংলাদেশি মডেল। বয়স ২৩ বছর। জন্মগত ভাবে পুরুষ। লিঙ্গান্তর ঘটিয়ে নারী হয়েছেন। যদিও এখনো সর্বাংশে ‘নারী’ হননি। তবু স্বপ্ন দেখছেন মিস ওয়ার্ল্ড হওয়ার। অ্যামেলিয়ার বাবা মায়ের দেওয়া নাম ‘আদেশ’।
বর্তমান আছেন কানাডার টরেন্টোতে। পুরুষ থেকে নারীতে রুপান্তরের জন্য ইতোমধ্যে আট হাজার পাউন্ড খরচ করেছেন তিনি। এর মধ্যে স্তন স্থাপনে ৬ হাজার ও ত্বকের চুল দূরীকরণে দুই হাজার পাউন্ড খরচ হয়েছে।
তবে এখনো বাকি রয়েছে অ্যামেলিয়ার পূর্ণাঙ্গ লিঙ্গ স্থিরীকরণ অস্ত্রোপচার। পুরো বিষয়টিতে অ্যামেলিয়াকে সহযোগিতা করছেন তার ব্যক্তিগত ট্রেইনার ও বয়ফ্রেন্ড চার্লস দাবাক। দুজন এখন একসাথেই থাকছেন।
বুধবার অ্যামেলিয়াকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মেইল অনলাইন। অ্যামেলিয়ার জন্ম বাংলাদেশের একটি মুসলিম পরিবারে। পড়াশোনার জন্য কানাডায় গিয়েছেন ২০০৯ সালে। এখন সেখানে বিজনেস একাউন্টিং বিষয়ে পড়ছেন।
‘পূর্ণাঙ্গ নারী’ হওয়ার পথে থাকা অ্যামেলিয়া বর্তমানে মডেলিং করছেন। গত বছর টরেন্টোতে আবেদনময়ী পোশাকের একটি ফটোশ্যুট করেন অ্যামেলিয়া; যেটি স্থানীয় পত্রিকা দ্য টরেন্টো সান পত্রিকায় প্রকাশ হয়। মেইল অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অ্যামেলিয়া বলেন, ‘বড় হতে হতে আমি অনুভব করলাম, আমার শারীরিক গঠন ঠিক নয়। আর লিঙ্গ পরিবর্তনের চিন্তা কখনো ছিল না।
তবে এখন ভাবি, যদি আমি স্রষ্টা এবং নিজের ওপর বিশ্বাস রাখি, আমার মনে থাকা যেকোনো কিছু আমি অর্জন করতে পারবো।’ কানাডাতে গিয়ে অ্যামেলিয়া সার্জারি এবং মেডিসিনের মাধ্যমে জন্ম লিঙ্গ পরিবর্তন করার বিষয়ে প্রথম জানতে পারেন। প্রথমে শরীরের বয়সের জন্য হরমোন কোর্স করেন তিনি। এর দুই মাস পর থেকে স্তন স্থাপনের কাজ শুরু করেন। তারপরই আট হাজার পাউন্ড ব্যয় করেন স্তন এবং ত্বকের চুল দূরীকরণে। বর্তমানে মডেলিং নিয়েই ব্যস্ততা তার।
চলতি বছর সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন অ্যামেলিয়া। তার স্বপ্ন ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ হবেন। ‘মিস ওয়ার্ল্ড হওয়াটা এখন আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন।’ আর এ কাজে অ্যামেলিয়ার অনুপ্রেরণা কানাডার লিঙ্গান্তর ঘটানো মডেল জেনা তালাকোভা।
গত বছর কানাডায় মিস ইউনিভার্সে অংশ নেয়ার জন্য একটি আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন জেনা।
গত বছর কানাডায় মিস ইউনিভার্সে অংশ নেয়ার জন্য একটি আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন জেনা।
অ্যামেলিয়াকে নিয়ে তার বয়ফ্রেন্ড চার্লস বলেন, ‘আমি প্রথমে জানতাম না অ্যামেলিয়া ট্রান্সজেন্ডার। যখন । আমাকে সে বলল আমি স্বাভাবিকভাবে নিলাম। শুরুতে এটা কঠিন ছিল যখন সে রুপান্তরের প্রথম স্তরে ছিল। এখন আমাদের জন্য এটা কোনো ইস্যু নয়। আমি তাকে ভালোবাসি। আমি মানুষকে বলি আমরা স্পেশাল কাপল।
আমি আমার পরিবারের সাথেও তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। তারাও খুশি। রুপান্তরের মাধ্যমে আসা এবং মডেলিংয়ে ক্যারিয়ার গড়াটা বিশাল ব্যপার।’ বাংলাদেশে থাকাকালীন অতীত নিয়ে অ্যামেলিয়া বলেন, ‘আমি সব সময় জানতাম আমি অন্যান্য ছেলে থেকে আলাদা। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কেউ এ ধরনের বিষয় নিয়ে কথা বলে না। আমি বাড়িতে গেলে সব সময় মায়ের কাপড় পরতাম। মা বাইরে থাকলে তার মেকআপ ও ব্যবহার করতাম। এসব করতে ভালো লাগত। কিন্তু কখনো সাহস করতাম না। কারণ আমার বাবা-মা খুবই ধর্মীয় মনোভাবের। তাই আমার মনে হতো তারা কখনোই এমনটা গ্রহণ করবে না। মেয়েলী বিষয়ের কারণে স্কুলে অনেকেই আমাকে খেপাত। অনেক রাত আমি কেঁদেছি আমি যদি অন্যরকম হতাম!’
অ্যামেলিয়ার শারীরিক গঠনের বিষয়টি ধরা পড়ে একটি অপারেশনের মাধ্যমে। প্রথমে তার পরিবার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে না নিলেও পরবর্তীতে মেয়েকে কোনো বাঁধা দেননি। দেশের বাইরেও পড়তে গেছেন নিজের ইচ্ছাতেই। বর্তমান অবস্থা পরিবার কীভাবে নেবে তার জবাব দিতে গিয়ে অ্যামেলিয়া বলেন, ‘আমাকে স্তনসহ দেখলে প্রথমে তাদের খুব কষ্ট হবে। তবে আমি যেমনই হই না কেন, পরিবার আমাকে ভালোবাসে।’ নিজের সম্পর্কে অ্যামেলিয়ার মন্তব্য, ‘আমি মনে করি আমি সুন্দর একজন নারী। আর মানুষও আমাকে এজন্য মর্যাদা দেবে।
0 comments: