রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ইয়াবা ও ইয়াবা তৈরির সরঞ্জমাদিসহ আটক বিলাসবহুল গাড়িটি জাতীয় পার্টির এমপি কাজী ফিরোজ রশীদের ছেলে সায়েম রশীদ এবং তার পরিবার ব্যবহার করতেন। কোনো রকম কাগজপত্র ছাড়াই তারা দীর্ঘ ছয় মাস গাড়িটি ব্যবহার করে রাজধানীর একটি গ্যারেজে বিক্রি করে দেন। এরপর সেখান থেকে মাদক চোরাকারবারীর সঙ্গে জড়িত জুবায়ের আহমেদ কিনে নিয়েছেন বলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তথ্য পেয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর একটি শোরুম থেকে আট মাস আগে গাড়িটি কিনেছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা ও এমপি কাজী ফিরোজ রশীদের ছেলে সায়েম রশীদ। এ নিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে গোয়েন্দারা। যদিও প্রকাশ্যে এ নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না কোনো পুলিশ কর্মকর্তা।
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ ঢাকায় আসলে আটক জিপ গাড়িটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ডিবি। কমিশনার দেশে না আসা পর্যন্ত গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে চাইছেন না কোনো পুলিশ কর্মকর্তা।’
এ বিষয়ে এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ জানান, ‘আমার ছেলে সায়েম সাদা রংয়ের পাজেরো জিপ গাড়িটি গুলশানের একটি শোরুম থেকে আট মাস আগে কিনেছিলো। গাড়িটি তিন মাসের বেশি চালানোর পর পছন্দ না হওয়ায় তা ওই শোরুমেই ফেরত দেওয়া হয়। যার নম্বর ঢাকা মেট্রো ম-৫০১।’
গাড়িটির কোনো কাগজপত্র করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গাড়িটি সায়েম কিনলেও সে গাড়ির কোনো কাগজ করেনি। পছন্দ না হওয়ায় তা ফেরত দিয়েছিল। যে দামে কিনেছিল তার চেয়ে চারলাখ টাকা কম দিয়েছিল শোরুম মালিক খালেক।’
গাড়িটি আটকের পর গোয়েন্দা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কিনা এ প্রসঙ্গে কাজী ফিরোজ রশীদ জানান, ‘আমাকে গোয়েন্দা পুলিশ গাড়িটির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছে। তাদেরকেও আমি এসব কথা বলেছি। কিছুই গোপন করিনি।’
এদিকে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ‘মিয়ানমারের নাগরিক ও ইয়াবা ব্যবসায়ী জুবায়ের আহমেদ তাদের কাছে দাবি করেছিলো আটক পাজেরো গাড়িটি তার। নিকেতনে সে দুটি ফ্লাটের মালিক। তার কেনা একটি ফ্লাটের আগের মালিকের বড় ভাই রতন। তার থেকে ৬৫ লাখ টাকায় গাড়িটি অন্তত ছয় মাস আগে কিনেছিল জুবায়ের। তবে তার কাছে নিজের নামে গাড়ির মালিকানা সংক্রান্ত কোনো কাগজ ছিল না। তাই গাড়িটির বৈধ কাগজপত্র কার নামে তা জানতে চেষ্টা করছে গোয়েন্দারা।’
রতন পলাতক রয়েছে জানিয়ে গোয়েন্দা সূত্রটি জানায়, ‘জুবায়ের দাবি করেছে রতন এক এমপির কাছ থেকে গাড়িটি কিনে তার কাছে বিক্রি করেছিল। তবে সেই এমপির পরিচয় জানাননি জুবায়ের। রতন পলাতক থাকায় এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।’
অপরদিকে গাড়ির ডানপাশের ডোরে একটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। তবে সেটি গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে হয়নি বলেও সূত্রটি জানিয়েছে।
গত ২৪ আগস্ট (রোববার) সন্ধ্যায় খিলগাঁওয়ের খিদমাহ হাসপাতালের সামনে একটি পাজেরো জিপে তল্লাশি চালিয়ে ইয়াবা তৈরির যন্ত্রের সঙ্গে ৫৫ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেটসহ ওই গাড়িটি আটক করে ডিবি পুলিশ। এসময় গ্রেফতার হয় ইয়াবা ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ জুবায়ের (২৮), আইয়ুব আলী (৪৫), শামসুল আলম (২৪) ও মোস্তাকিন হোসেন ওরফে সানি।
গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা থেকে ইয়াবা রাজধানীতে প্রবেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঝুঁকি থাকায় ঢাকাতেই তারা ইয়াবা তৈরির পরিকল্পনা করেছিল।
পরদিন ২৫ আগস্ট (সোমবার) এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, ‘টেকনাফ থেকে সাদা রংয়ের পাজেরো জিপে ইয়াবা, ইয়াবা তৈরির মেশিন নিয়ে তারা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সায়েদাবাদ হয়ে খিলগাঁওয়ে পৌঁছার পর ধরা পড়ে।’
আবদুল্লাহ জুবায়েরকে ইয়াবামাদক চক্রটির হোতা বলে মনে করছে পুলিশ।
জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘পাজেরো জিপটিও তার। ইয়াবা বহনের জন্য এটি ব্যবহার হতো। জুবায়েরের নিকেতনে রয়েছে বিলাসবহুল দুটি ফ্ল্যাট। ভারতের দার্জিলিংয়ে এইচএসসি পর্যন্ত পড়েছেন তিনি। এরপর জড়িয়ে পড়েন মাদক ব্যবসায়।’
0 comments: