রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৫

বাঙ্গালী এক তরুনী যখন বিয়ে করলেন সভ্যতা থেকে হাজার ক্রোশ দূরে আমাজানের অসভ্য নগ্ন গোষ্ঠীর সর্দারকে !

পৃথিবী যখন আধুনিকায়নের সিঁড়ি বেয়ে দিন দিন মহাশূন্যের গ্রহ নক্ষত্র চাঁদ সবকিছু মানুষের হাতের মুঠোই নিয়ে এসেছে ঠিক এই সময় দক্ষিণ আমেরিকার বিশাল আমাজান নদীবিধৌত অঞ্চল ব্রাজিলের অ্যাকরি রাজ্যের পেরুর সীমান্ত ঘেঁষা অঞ্চলের গভীর আমাজান জঙ্গলে এখনো সভ্যতার আলো ছাড়া বাস করে প্রাচীন উপজাতীয় মানবগোষ্ঠী। যাদের অনেকের সঙ্গেই কোনো যোগাযোগ নেই সভ্য দুনিয়ার। যাদের পরনে এখনও কোন কাপড় নেই।
লাতিন আমেরিকার দেশ ইকুয়েডর। আর সেখানকার আমাজানের গহীনে বসবাস করে এক দল আদিবাসী, যারা এখনো কাপড় পরতেও শিখেনি, সভ্যতার ছোঁয়া যেন তাদেরকে এখনো ছুঁতে পারেনি। সেই বনের মাঝে অর্ধনগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক বাঙালি নারী। তাও আবার ওখানকার আদিবাসি সরদারকে বিয়ে করে!
বাঙালি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা সারাহ বেগম লন্ডনের কিংস্টোন কলেজ থেকে তখন মাত্র ডিগ্রি শেষ করেছেন। তার স্বপ্ন জীবনে তিনি ব্যতিক্রমী কিছু করবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। নিজের জমানো সঞ্চয়টুকু দিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের বিমান টিকিট কিনলেন।
সারাহ বেগম
সারাহ বেগম
সেই সঙ্গে ভাড়া করলেন একজন সিনেমাটোগ্রাফার। ব্যাস, ছুটলেন আমাজান জঙ্গলে বসবাসরত হুয়ারোয়ানি আদিবাসীদের গ্রামে। উদ্দেশ্য- তাদের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের মাধ্যমে তাদের ওপর তেল অনুসন্ধানকারী কোম্পানিগুলোর হুমকির বিষয়টি তুলে ধরা।
কিন্তু সেখানে যাওয়ার কয়েকদিনের মাথায় বিয়ে করে ফেললেন সভ্যতার আলো থেকে বহু দূরে থাকা আদিবাসীটির এক শিকারি পুরুষকে। তাও আবার কনের বয়স যেখানে ২১, বরের বয়স ৫০!হুয়ারোয়ানি আদিবাসীর লোকেরা বাস করে দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে তেল সমৃদ্ধ এলাকাটিতে। এ কারণে সেখানে তেল অনুসন্ধানকারী কোম্পানিগুলোর আনাগোনা বেশি। ইতিমধ্যে সেখানে আসন গাড়ার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে বড় বড় পাঁচটি তেল কোম্পানি। এর ফলে হুমকির মুখে পড়ে এ এলাকার বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্র ও জীববৈচিত্র্য। এ বিষয়টি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার জন্য ২০১০ সালে ইকুয়েডের যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সারাহ।
সারাহ সে সময় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। জীবনে ব্যতিক্রমী কিছু একটা করছেন- এ বিশ্বাস থেকে চাকরিটা ছেড়ে দেন। হাতে জমানো টাকা দিয়ে কিনে ফেললেন ইকুয়েডরের বিমান টিকিট। সঙ্গে নিলেন একজন সিনেমাটোগ্রাফার। ইকুয়েডরে গিয়ে নিলেন একজন গাইড। এরপর চললেন হুয়ারোয়ানিদের গ্রাম বামেনোতে।
হুয়ারোয়ানিদের মোট জনসংখ্যা তিন হাজার। বিদেশিদের ব্যাপারে তাদের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত তিক্ত। ১৯৫৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঁচ ধর্মযাজক এসেছিলেন হুয়ারোয়ানিদের ধর্মান্তরিত করতে। এ নিয়ে সংঘর্ষ বেঁধে গেলে নিহত হয় ওই পাঁচ যাজক। এরপর থেকেই বিদেশিদের সম্পর্কে একটা বাজে ধারণা রয়েছে এ বামেনোর বাসিন্দাদের। তবে সারাহ যখন তার উদ্দেশ্যের কথা জানালেন গ্রামবাসী বেশ ভালোভাবেই বরণ করে নিল।
সারাহ জানান, গ্রামে যাওয়ার কয়েকদিন পর তাকে একটি কুঁড়েঘরে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘরের নারীরা সব নগ্ন। তারা সারাহকে জানালো, তার জন্য তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক তৈরি করছে। গাছের আঁশ দিয়ে তৈরি এ জামাটি কেবল কটিদেশে জড়ানো হয়। ঘরের নারীরা সারাহকে তার কাপড়চোপড় খুলে ফেলতে বলে। সারাহর কাছে প্রথমে মনে হয়েছিল যেহেতু এগুলো রেকর্ড করা হচ্ছে তাই তিনি নগ্ন হতে পারবেন না।
এক সময় মনে হলো তিনি সেখান থেকে ছুটে পালাবেন। পরে অবশ্য মনে হলো তিনি তাদের সংস্কৃতিটা খুব কাছ থেকে বুঝতে চান। এ কারণে আর দ্বিমত করলেন না। একজন নারী এসে সারাহর জামাগুলো খুলে নেয়। পুরোপুরি নগ্ন করার পর তারা ম্যাকাও পাখির পাখা দিয়ে তৈরি একটি মুকুট পরিয়ে দেয়। পরে তারা সারাহকে ঘিরে নাচতে শুরু করে।
এসময় তারা জানায়, সারাহকে তারা রানী করতে যাচ্ছে। এসময় গোত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় যোদ্ধা গিনক্তোর সঙ্গে তার বিয়ে দেয়া হয়। এতে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সারাহ। পরে উপজাতির লোকেরা জানায়, বিয়ে মানা কিংবা না মানা সারাহর ইচ্ছা। এটা কেবল একজন বহিরাগত হিসেবে গোত্রের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার প্রতীক হিসেবে করা হয়েছে।
স্থানীয় ভাষা না জানলেও সারাহ নতুন স্বামীর সঙ্গে কাজ চালিয়েছেন তার সঙ্গে থাকা গাইডের মাধ্যমে। যে কাজের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন সেটা বেশ ভালোভাবেই শেষ করেছেন সারাহ।
240ABE5300000578-2873676-image-a-51_1418592494284এক পর্যায়ে সঙ্গে থাকা সিনেমাটোগ্রাফার বুলের হাত কেটে গেলে তাতে সংক্রমণ দেখা দেয়। সারাহরও কৃমির সমস্যা দেখা দেয় এবং তা পাকস্থলিতে সংক্রমিত হলে তারও চিকিৎসার প্রয়োজন দেখা দেয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ফিরে আসেন আধুনিক দুনিয়ায়।
হুয়ারোয়ানিদের ওপর নির্মিত সারাহর প্রামাণ্যচিত্র গত বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে ঠাঁই পেয়েছিল। এছাড়া শেফিল্ড ডকুমেন্টারি ফেস্টিভাল ও অ্যাডভেঞ্চার ফিল্ম ফেস্টিভালেও জায়গা করে নিয়েছিল আধা ঘণ্টার এই প্রামাণ্যচিত্রটি। এর বদৌলতে রয়েল জিওগ্রাফি সোসাইটি সারাহকে তাদের ফেলো বানিয়ে নিয়েছে।

এখনো সম্পূর্ণ আদিম সভ্যতায় অদ্ভুত জীবন-যাপন কারী আমাজান জঙ্গলের অধিবাসীদের অজানা রহস্যকথা

চার বছর হলো সারাহ হুয়ারোয়ানিদের কাছ থেকে ফিরে এসেছেন। তবে তিনি তাদের ভুলে যাননি। হুয়ারোয়ানিদের যারা মাঝে মাঝে শহরে আসে তাদের সঙ্গে ইমেইল ও ফেসবুকে যোগাযোগ হয় তার। সারাহর ইচ্ছা, আরেকবার সুযোগ পেলে তিনি তাদের দেখতে ছুটে যাবেন।


SHARE THIS

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 comments: