যানজট-জলজট আতঙ্কে অনেকে বাসা থেকেই বের হননি। আর যে কারণে গতকালের রাজধানী ছিল অনেকটাই ফাঁকা। সকাল থেকে বৃষ্টি হলেও দুপুর নাগাদ তা থেমে যায়। কিন্তু মানুষ ভোগান্তির কথা চিন্তা করে অনেকেই বাসায় অলস সময় কাটান। এক দিনের জলাবদ্ধতা রাজধানীর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিটি সবজির কেজি গতকাল অন্তত ১০ টাকা বেশিতে কিনতে হয়। গতকালও কোনো কোনো এলাকার প্রধান সড়কে পানি আটকে ছিল। এ দিকে, রাজধানীর কিছু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে বাসাবাড়ির নিচতলায় পানি জমে রয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর নি¤œাঞ্চলের বাসাবাড়ির নিচতলায় এখন হাঁটুপানি। ওই সব এলাকার বাসিন্দারা এখন মহা বিপাকে।
গত মঙ্গলবার দিনভর বৃষ্টিতে অচল ছিল রাজধানী। সকালের বৃষ্টি উপেক্ষা করে যারা বের হয়েছিলেন কাজে তারা পড়েন মহা বিপাকে। কাজ তো হয়ই নি, উল্টো দিনভর কেউ কেউ যানবাহনে আটকে থেকেছেন, আর অনেকে কাকভেজা হয়ে ঘরে ফিরেছেন দুঃসহ ভোগান্তির পরে। পথেঘাটে অসংখ্য খানাখন্দক আর উন্নয়নের নামে সৃষ্ট বড় বড় গর্তে পড়ে অনেকে আহত হয়েছেন। অসংখ্য যানবাহন পানিতে আটকে অকেজো হয়েছে। আর এসব কারণে দিনভর ছিল ভয়াবহ যানজট।
পরশুর এই ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে অনেকেই গতকাল ঘর থেকে বের হননি। একেবারে যারা চাকরি-বাকরি করেন, বা খুবই জরুরি কাজের জন্য বাইরে বের হতে হবে তারা ছাড়া। গতকালও সকালে রাজধানীতে ছিল বৃষ্টি। দুপুর ১২টার দিকে বৃষ্টি থেমে যায়। এরপর বৃষ্টি না হলেও মানুষের মধ্যে ভয় ছিল পানির। গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাটে পানি লক্ষ করা গেছে। হাঁটু না ডুবলেও সেই পানিতে পা ভিজেছে। আর কোথাও কোথাও হাঁটুপানিও লক্ষ করা গেছে। ঝিগাতলা গাবতলা মসজিদ থেকে পা ভেজা পানি দেখা গেছে ঝিগাতলা মোড় পর্যন্ত। বউবাজারে গতকালও ছিল হাঁটুপানি। লালবাগের বিভিন্ন গলিতে গতকালও হাঁটুপানি লক্ষ করা যায়। পোস্তাগোলার করিমুল্লার বাগ, কদমতলী ও শ্যামপুরের বিভিন্ন এলাকা, গেন্ডারিয়ার বিভিন্ন রোডে গতকালও হাঁটুপানি লক্ষ করা যায়। প্রধান প্রধান সড়কে গতকালও পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। শান্তিনগর, নয়া পল্টনসহ বেশ কয়েকটি রাস্তায় গতকালও পানি জমে ছিল। তবে প্রধান সড়কগুলোর এই পানি মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করেনি। উল্টো কোনো কোনো এলাকায় গতকাল ছুটির আমেজ লক্ষ করা যায়।
এ দিকে, জলাবদ্ধতার কারণে বেশির ভাগ রাস্তার অবস্থা একেবারে নাজুক হয়ে গেছে। এক দিন আগেও যেসব রাস্তা চলাচলের উপযোগী গতকাল তার অনেক রাস্তায় বড় বড় গর্ত লক্ষ করা যায়। পানিতে ডুবে থেকে রাস্তার ওপরের স্তর উঠে গেছে। এসব রাস্তা এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।
গতকালও রাজধানীর বেশির ভাগ ফুটপাথের দোকানপাট বন্ধ ছিল। রাস্তায় যানবাহন কম লক্ষ করা গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও উপস্থিতি ছিল কম। রাজধানীর মধুবাজারের বাসিন্দা নেওয়াজ বলেন, তিনি তার সন্তানকে নিয়ে গতকাল আর স্কুলে যাননি। আগের দিন ভোগান্তির কথা চিন্তা করেই গতকাল বাসা থেকে বের হননি।
এ দিকে, এক দিনের বৃষ্টির ফলে রাজধানীর নি¤œাঞ্চল বিশেষ করে হাজারীবাগ, কামরাঙ্গিরচর, লালবাগ, শ্যামপুর, কদমতলী, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, মুগদা, ডেমরা ও সবুজবাগের বেশ কিছু এলাকার বাসাবাড়ির নিচতলায় পানি জমে ছিল। ওই সব এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এভাবে দু-চার দিন পানি জমে থাকলে তাদের মহা ভোগান্তি হবে। ইতোমধ্যে তাদের ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। রান্নাবান্নাও অনেকের বন্ধ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পানি নিয়েও তারা সমস্যায় পড়েছেন। ওই সব এলাকার অনেক দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে।
মান্ডা এলাকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঘর থেকে বের হতে এখন নৌকা লাগবে। মাতুয়াইলের বাসিন্দা নাজিম বলেন, নৌকায় করে এখন বাসা থেকে বের হতে হয়। এভাবে আরো কয়েক দিন জলাবদ্ধতা থাকলে মহা সমস্যায় পড়বেন তারা।
0 comments: