২৪ ঘণ্টায় ৩০ পুরুষের ধর্ষণ। সাতদিন এক নাগাড়ে, সঙ্গে মারধর! সেই ভয়াবহ দিনগুলো দুঃস্বপ্নের মতো। আজও তিনি শিউরে ওঠেন। কতই বা বয়স তখন। বছর ১৪, খুব বেশি হলে। স্কুল, বন্ধুদের সঙ্গে খেলা, বই পড়া, গান শোনা -- নিশ্চিন্ত, সুখের মেয়েবেলাই তো তাঁর প্রাপ্য ছিল। একদিন সব সব ওলটপালট হয়ে গেল। পাড়ার এক কাকুর হাত ধরে কাজের খোঁজে নেপাল থেকে ভারতের মুম্বাই।
তারপর মর্মান্তিক সেই ছবি। একটি ঘরে বন্দি। চিত্কার করেও কোনও লাভ নেই। একের পর এক লোক ঢুকে মিটিয়ে যাচ্ছে বিকৃত যৌন লালসা। ক্লান্ত, রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে রয়েছেন তিনি। সেই অন্ধকার জগত থেকে কোনও ক্রমে পালিয়ে বেঁচেছিলেন নেপালের সুনীতা দুয়াঁওয়ার। পাচার হওয়া নাবালিকাদের যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার করাই এখন ব্রত সুনীতার।
ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত নেপালে এখনও হাহাকার। প্রকৃতির রোষে সব হারিয়ে প্রতিনিয়ত বাঁচার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে নেপালবাসী। আর তাঁদের এই দুরাবস্থার সুযোগ নিতে ব্যস্ত নারীপাচারকারীরা। কাজের প্রলোভন দেখিয়ে নাবালিকাদের ভারতে পাচার করে জোর করে যৌনপল্লিতে ঠেলে দেওয়ার ঘটনা নেপালে নতুন নয়।
ভূমিকম্পের পর তা আরও বেড়েছে। নারীপাচারকারীদের বিরুদ্ধে একা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সুনীতা দুয়াঁওয়ার। যৌনপল্লির অন্ধকার থেকে নাবালিকাদের উদ্ধার করার লড়াই। হাজারো চোখরাঙানি, প্রাণে মারার হুমকি -- সব কিছু উপেক্ষা করেই তিনি লক্ষ্যে অবিচল।
সুনিতা জানাচ্ছেন, ২০ বছর আগে তাঁর সঙ্গেও ঘটেছিল সেই ভয়াবহ ঘটনা। বিস্ফোরক স্বীকারোক্তিতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন দুনিয়ায়। জানাচ্ছেন, তাঁর যখন ১৪ বছর বয়স, তখন তাঁকে ভারতে কাজ দেওয়ার নাম করে নিয়ে যাওয়া হয়। সংসারের অভাব মেটাতে পাড়ার আঙ্কেলের সঙ্গে রাজি হয়ে যান তিনি। মুম্বাই গিয়ে সেই আঙ্কেল হঠাত্ বদলে গেল। একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে তালা দিয়ে চলে গেল। বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি বিক্রি হয়ে গিয়েছেন। এখন এই নরককুণ্ডই তাঁর ভবিতব্য। এরপর শুরু অত্যাচার।
সুনীতার কথায়, 'পাঁচ মাস আমি বন্দি ছিলাম। ঘরের বাইরে বেরোতে দেওয়া হত না। একের পর এক লোক ঢুকত। তারপর শুরু করত ধর্ষণ। এই ভাবেই কাটত গোটা সপ্তাহ। এমনও দিন গিয়েছে যে, একদিনে ৩০ জন পুরুষ আমাকে ছিঁড়ে খেয়েছে। বাধা দিলেই জুটেছে মার। জোর করে মুখে ঢুকিয়ে দেওয়া হত খাবার। এমনকি ঘুমিয়ে পড়লেও আমাকে মাঝরাতে তুলে বলা হত, কাস্টমার এসেছে। তোমার সঙ্গে সেক্স করতে চায়।'
পাঁচ মাস এই অত্যাচার সহ্য করার পর পালিয়ে যান সুনীতা। তারপর জীবনের ব্রত করেন, পাচার হওয়া নাবালিকাদের তিনি উদ্ধার করবেন। তাঁর মতো অবস্থা যেন কারও না হয়। সুনীতার কথায়, 'সারা বিশ্বে ২ লক্ষ ২৮ হাজার ৭০০ নেপালি নাবালিকা যৌনপল্লিতে আটক রয়েছে। জাতিসঙ্ঘের রিপোর্ট বলছে, প্রতিবছর কাজ দেওয়ার নাম করে ৭ হাজার নাবালিকাকে নেপাল থেকে পাচার করা হয়। এই কাজ আমি বন্ধ করবই।'
0 comments: