১৬ সেপ্টেম্বর- কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে গরু আসছে। কিছু কিছু স্থানে কড়াকড়ি থাকলেও বেশ কয়েকটি করিডর দিয়ে গত বছরের তুলনায় বেশি গরু এসেছে বলে জানা গেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, সারা দেশে খামারি ও সাধারণ মানুষের কাছে কোরবানির যোগ্য ৪০ লাখ হৃষ্টপুষ্ট গরু ও মহিষ আছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, এ বছর ৫০ লাখের মতো কোরবানি হতে পারে। এদিকে রাজধানী ঢাকার গরুর হাট এবং কোরবানি নিয়ে সিটি করপোরেশন ও পুলিশ গতকাল মঙ্গলবার তাদের পরিকল্পনা জানিয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, আগামী শনিবারের (১৯ সেপ্টেম্বর) আগে ঢাকায় গরু ঢুকতে দেওয়া হবে না। আর গরুর হাটগুলোকে তাদের চৌহদ্দির বাইরেও ছড়াতে দেওয়া হবে না। প্রতিবেশী দেশ ভারত তাদের সীমান্তে গরু ‘পাচারে’র ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করলেও দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে গত বছরের তুলনায় এবার বেশি ভারতীয় গরু এসেছে। গরু আসছে পূর্বের মিয়ানমার সীমান্ত দিয়েও। তবে সাতক্ষীরা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে গরু কম আসছে বলে জানা গেছে। রাজশাহী কাস্টমস কমিশনারের কার্যালয়ের অধীনে ভারত থেকে গবাদিপশু আমদানির মোট আটটি করিডর রয়েছে। কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্টে উত্তরাঞ্চলের সাতটি করিডর দিয়ে ৩৬ হাজার ৩০৭টি গবাদিপশু বাংলাদেশে ঢুকেছে। এর মধ্যে গরু ২৭ হাজার। গত বছর এ সময়ে গবাদিপশু আসার সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৩০৩। সুলতানগঞ্জ করিডর দিয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম ১২ দিনে ৩ হাজার ৪০০ গরু-মহিষ ঢুকেছে। রাজশাহীর সবচেয়ে বড় গবাদিপশুর হাট হচ্ছে নগরের সিটি বাইপাস হাট। এই হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান বলেন, গত মাসেও ভারতীয় গরুর বড় চালান এসেছে শুনেছেন কিন্তু তাঁরা সেই গরু-মহিষ পাননি। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা সরাসরি সুলতানগঞ্জ ও কানসাট থেকে নিয়ে চলে গেছেন। লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ইসলামপুর শুল্ক করিডর দিয়ে গরু আসছে। কাস্টম সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্ট থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ৬০৭টি গরু আসে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৫৫। কুড়িগ্রামের কাস্টম অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের জুলাই থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গরু এসেছে প্রায় ৬০ হাজার। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৬৭৫। কক্সবাজারে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত গরু এসেছে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল সাড়ে চার হাজারের কম। বগুড়ায় এবার দেশি খামারিদের কাছ থেকে বেশি গরু পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। জেলার অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খন্দকার বজলুর রহমান বলেন, এবারের কোরবানির বাজার সামনে রেখে জেলার ১ হাজার ২৬১টি খামার ও কৃষকের বাড়িতে মোট ৭৬ হাজার ৮২২টি পশু হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর জেলায় ১ লাখ ৩৫ হাজার গরু এবং ৮৯ হাজার ছাগল ও ভেড়া কোরবানি হয়েছিল। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির হাটে গরু আসবে। ঢাকায় পুলিশের নির্দেশ: গতকাল কোরবানির ঈদ নিয়ে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা-বিষয়ক সভায় ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, ব্যবসায়ী, পরিবহন নেতারাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এবার ডিএমপির আওতার মধ্যে একটি স্থায়ীসহ ২৩টি পশুহাট বসবে। তবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে পশুহাটের সংখ্যা ১৭। সভায় ডিএমপির কমিশনার আশ্বস্ত করেন, গরু হাটে কোনো চাঁদাবাজি চলবে না। চাঁদাবাজদের ধরার ক্ষেত্রে দলীয় পরিচয়সহ অন্য যেকোনো পরিচয়ই বিবেচনায় না নিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়। সভায় কমিশনার বলেন, এবারে গরুর হাটগুলোকে তাদের চৌহদ্দির বাইরে আসতে দেওয়া হবে না। হাটের ইজারার কাগজে উল্লেখিত নির্ধারিত সীমানার ভেতরেই হাটের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। ১৮ সেপ্টেম্বর থেকেই হাটে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। তবে ১৯ সেপ্টেম্বরের আগে ঢাকায় অস্থায়ী হাটগুলোর জন্য কোনো গরু ঢুকতে দেওয়া হবে না। হাটগুলোতে সিসি ক্যামেরা, পুলিশের নিয়ন্ত্রণকক্ষ ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থাকবে। তিনি বলেন, হাটগুলোতে প্রকাশ্য স্থানে পশু বিক্রির হাসিলের দর লিখে রাখতে হবে। আর পশু ব্যবসায়ীরা যে হাটে গরু নিতে চান, তাঁরা যেন সে হাটেই গরু নিতে পারেন, এ বিষয়টি নিশ্চিত করবে পুলিশ। এ ক্ষেত্রে কোনো জবরদস্তি করা যাবে না। এমনকি বেশি টাকা পরিবহনের জন্যও পুলিশের সাহায্য নিতে পারবেন গরু ব্যবসায়ীরা। হাটের ব্যবসায়ীদের লেনদেনের সুবিধার্থে হাট এলাকার ব্যাংকগুলোতে সন্ধ্যাকালীন লেনদেনের সুবিধা থাকবে বলে সভায় জানানো হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে সান্ধ্য লেনদেনের সুবিধা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা হয়েছিল। রাত নয়টা পর্যন্ত হাটের আশপাশের ব্যাংকগুলোতে সন্ধ্যাকালীন লেনদেন করা যাবে। সরকারি ছুটির দিনও ওই সব ব্যাংকে লেনদেন চলবে। হাটে জাল টাকা শনাক্তকরণের ব্যবস্থা থাকবে।
বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
Author: সময়ের তাজা কাহিনী
Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.
0 comments: