১৬ সেপ্টেম্বর- নামে বেনামে গড়ে ওঠা গণমাধ্যম ও ‘ভুয়া’ সাংবাদিকদের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজনীতিবিদদের মতো ‘হাইব্রিড’ সাংবাদিক তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে ওইসব সাংবাদিকরা যেন মূল ধারার সাংবাদিকদের কোণঠাসা করে ফেলতে না পারে সে বিষয়েও সতর্ক করেন তিনি। বুধবার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন ও গণমাধ্যম শীর্ষক কর্মশালার সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য দেন এক সময়ের সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “হাইব্রিড শুধু এখন রাজনীতিতে নয়, হাইব্রিড এখন সাংবাদিকতায়ও। শুধু মফস্বলে নয়, ঢাকায়ও আছে। “পরিচয়পত্র লাগিয়ে ঘুরঘুর করছে, খুব ব্যস্ত। বলি, আরে কি ব্যাপার, এত ব্যস্ততা কীসের? বলে, আমি সাংবাদিক। আই অ্যাম অ্য জার্নালিস্ট- খুব ভাব নিয়ে বলে।” “তো জার্নালিস্ট কোন কাগজে আছেন? কোন মিডিয়ায় আছেন? বলে, ফ্রিল্যান্স। এ রকম অনেক সাংবাদিকই আছে। মফস্বলে খবর নেন অনেকে ডিসি-এসপির অফিসে বসে থাকে। আমি কিন্তু সাংবাদিক কমিউনিটির উপর অ্যাটাক করছি না। এই কমিউনিটির উপর কেউ অ্যাটাক করলে আমি তা মেনেও নেব না।” সাংবাদিকতার নামে হাইব্রিড সাংবাদিকতা চলছে মন্তব্য করে কাদের। তিনি বলেন, “হাইব্রিড রাজনীতিতেও চলছে। বিলবোর্ড দেখলে মনে হয় বঙ্গবন্ধুর একটা ছবির সঙ্গে ৩৭টা ছবি। এরা কারা? কোত্থেকে এল এরা? বাংলাদেশ এখন নেতা উৎপাদনের কারখানা।” বাংলাদেশকে সাংবাদিক উৎপাদনেরও কারখানা হিসাবে অভিহিত করে মন্ত্রী বলেন, “প্রতিদিন নতুন নতুন সাংবাদিক দেখি। কোত্থেকে আসল? যারা রিয়েল জার্নালিস্ট, কষ্ট করেন, লেখাপড়া করেন, তাদের এসব সাংবাদিক (ভুয়া) দেখলে খারাপ লাগে; যেমন আমাদের পলিটিশিয়ানদের হাইব্রিড দেখলে খারাপ লাগে।” হাইব্রিড সাংবাদিকরা ভাল সাংবাদিকদের যেন কোণঠাসা করে ফেলতে না পারে সে বিষয়ে কর্মশালায় অংশ নেওয়া সাংবাদিকসহ উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সতর্ক করেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী। সাংবাদিকদের সমালোচনার সময় বামে বসা প্রধানমন্ত্রী তথ্য উপদেষ্ট ইকবাল সোবহান চৌধুরীর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে কাদের বলেন, “ডোন্ট মাইন্ড।” “এখন আর ভাল কথা নেই। ভাল কথার স্টক ফুরিয়ে গেছে, এখন আর গোডাউনে কোনো ভাল কথা নেই। এদেশে ভাল কাজের দৃষ্টান্ত খুব কম।” ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের আগে সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান প্রায় ৪০ মিনিট ধরে গণমাধ্যম, সাংবাদিকতা এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুল ধরে বক্তব্য দেন। নিজের বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, “যেই একটা মাইক পায় ভাষণ দিতে শুরু করে।” এসময় হাসির রোল পড়ে সম্মেলন কক্ষে। মন্ত্রীও হাসতে হাসতে আবার বলেন, “মাইক পাইলেই ভাষণ দিতে শুরু করে।” সব জায়গায় বিভক্তি তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে কাদের বলেন, জাতীয় প্রেস ক্লাব দুইভাগ হয়ে গেছে, যা জীবনেও দুইভাগ ছিল না। সিলেটে দুইভাগ, ঘরও দুইটা হয়ে গেছে। এখানে (জাতীয় প্রেস ক্লাব) মশারির মধ্যে মশারি। রাজশাহীতে গিয়ে শুনলাম তারা চার ভাগ। “হাইব্রিড মানসিকতা বেশি করে গ্রো করেছে, ওয়াল বেশি করে উঠছে। পদ্মাব্রিজ তৈরি হচ্ছে কিন্তু আমাদের সম্প্রীতির সেতু তৈরি হচ্ছে না। তবে নিজেদের সীমাবদ্ধতা থাকলেও দেশ বিস্ময়কর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।” ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের প্রশংসা করে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, “আবারও আশা করার মতো আলোক রেখা আমি দেখলাম।” কোনো মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিব সৎ হলে ওই মন্ত্রণালয়ের ৫০ শতাংশ দুর্নীতি এমনিতেই কমে যাবে মন্তব্য করে কাদের বলেন, “আশপাশের লোক অপকর্ম করলে মন্ত্রী নিজেকে সৎ দাবি করতে পারেন না।” জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের ফাইলের মান অনেক নিচুতে চলে গেছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “শুদ্ধ ফাইল খুব একটা পাই না। পড়লে আমি খুবই হতাশ হই। যারা বিসিএস কোয়ালিফাই করে এলো তাদের পড়াশোনার মান এত নিচে কী করে হয়?” সচিবালয়ে কর্মকরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের ৬০ জন সাংবাদিককে নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আয়োজিত দুই দিনের এই কর্মশালায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভুইঞা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ মাহবুব আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আব্দুল মালেকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিভিন্ন অধিবেশনে বক্তব্য দেন। এর আগে মঙ্গলবার বিকালে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক এই কর্মশালা উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ারও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইকবাল সোবহান।
বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
Author: সময়ের তাজা কাহিনী
Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.
0 comments: